মুলাদী প্রতিবেক ॥ বরিশালের মুলাদীতে জাল নিবন্ধন সনদ দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে ১২ লক্ষাধিক টাকা আতœসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের নাজিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ কবির হোসেন জাল সনদ দিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত বেতন ভাতাদি উত্তোলন করে আতœসাৎ করেছেন। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষায় ধরা পড়লে জাল নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষক কবির হোসেনকে উত্তোলনকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানাগেছে বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার বামরাইল গ্রামের আব্দুর রহমান বেপারীর পুত্র কবির হোসেন ২০১০ সালে পাস দেখিয়ে একটি নিবন্ধন সনদ (বিজ্ঞান) তৈরি করে। ওই জাল সনদ দিয়ে কবির হোসেন ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে মুলাদী উপজেলার নাজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং অবৈধ উপায়ে এমপিওভূক্ত হন। দীর্ঘদিন ধরে চাকুরি করলেও তাঁর জাল সনদের বিষয়টি কেউ জানতে পারেনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তৎকালীন অডিট অফিসার মোঃ মোকলেছুর রহমান ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন কালে বিজ্ঞান শিক্ষক মোঃ কবির হোসেনের সনদটির বিষয়ে সন্দেহ হলে তিনি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কতৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ে যাচাইয়ের জন্য প্রেরণ করে। ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর এনটিআরসিএ’র সহকারী পরিচালক ফারজানা রসুলের স্বাক্ষরিত পত্রে জানান মোঃ কবির হোসেনের সনদটি সঠিক নয়।
কবির হোসেনের সনদ পত্রে উল্লেখিত রোল ৩০৩০০০৪৫৬ নম্বরটি উত্তীর্ণ ফলাফল তালিকায় নেই। মোঃ কবির হোসেন জাল জালিয়াতের আশ্রয় নিয়েছেন মর্মে দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বিধায় তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে থানায় মামলা দায়েরপূর্বক এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। এনটিআরসিএর নির্দেশণা অনুসারে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মোঃ কবির হোসেনকে ১ ডিসেম্বর ২০১২ থেকে ৩১ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত গৃহীত ১০ লক্ষ ৭৭ হাজার ২০৫টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ দেন। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত তাকে বেতন ও উৎসব ভাতা দেওয়ায় তিনি জাল নিবন্ধন সনদে সরকারের ১২ লক্ষাধিক টাকা আতœসাৎ করেছেন। তবে গত জুলাই মাস থেকে তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোঃ কবির হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসাঃ শামিমা আক্তার জানান মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত জুলাই মাস থেকে সহকারী শিক্ষক মোঃ কবির হোসেনের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বেতন-ভাতা বন্ধ করাসহ আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ কবির হোসেনকে সরকারি টাকা ফেরত প্রদানের জন্য লিখিত নির্দেশনা দেওয়া হবে। তিনি টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হবে।
Leave a Reply